প্রকল্প/প্রায়োগিক গবেষণার শিরোনাম: মাশরুম উৎপাদন ও চাষ কেন্দ্র শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা |
|
উদ্যোগী মন্ত্রাণালয়/বিভাগ |
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় |
বাস্তবায়নকারী সংস্থা |
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড), কোটবাড়ী, কুমিল্লা |
বাস্তবায়নকাল |
অক্টোবর ২০১৮- জুন ২০২৫ |
বাজেট |
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট মোট ৬.৫০ লক্ষ টাকা |
অর্থায়নের ধরণ ও উৎস |
মহাপরিচালক, বার্ড কর্তৃক রাজস্ব বাজেটভুক্ত হিসেবে অনুমেদিত |
প্রকল্প পরিচালক/পরিচালকবৃন্দের নাম ও পদবী |
ড. মোঃ আনোয়ার হোসেন ভূঁঞা, পরিচালক (পল্লী সমাজতত্ব্ ও জনমিতি) ও প্রকল্প পরিচালক জনাব বাবু হোসেন, সহকারী প্রকল্প পরিচালক ও সহকারী পরিচালক (কৃষি ও পরিবেশ), বার্ড, কুমিল্লা। |
প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণার পটভূমি:
আমাদের দেশের গ্রামাঞ্চলে বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে ছায়াযুক্ত স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কিংবা স্তূপীকৃত গোবর রাখার স্থানে ছাতার আকৃতির সাদা রংয়ের এক ধরনের ছত্রাক জন্মাতে দেখা যায়। একে আমরা ব্যাঙের ছাতা বলে অভিহিত করে থাকি। আগাছার মতো যত্রতত্র গজিয়ে ওঠা এসব ছত্রাক খাবার উপযোগী নয়। অনুরূপ দেখতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের মাধ্যমে যে ব্যাঙের ছাতা উৎপাদিত হয়, তা অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং বিশ্বে সবজি হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই ব্যাঙের ছাতাকে ইংরেজিতে বলা হয় মাশরুম। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু মাশরুম চাষের জন্য উপযোগী। মাশরুম চাষের উপকরণ হলো কাঠের গুঁড়া, গমের ভূষি, ধানের তুষ, চুন, তুলা, নেক, রাবার ব্যান্ড, পিপি ব্যাগ ইত্যাদি। এসব উপকরণ অত্যন্ত সস্তা ও সহজে পাওয়া যায়। মাশরুম চাষ অত্যন্ত লাভজনক। মাত্র ১০-১৫ দিনেই এটি খাবার উপযোগী হয়ে ওঠে। এটি চাষের জন্য আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সহজলভ্য। বেকার যুবক-যুবতী ও নারীরা ঘরে বসে এর চাষ করতে পারেন। অন্যান্য সবজির তুলনায় বাজারে এর দাম অনেক বেশি, ফলে এর চাষ অত্যন্ত লাভজনক। অভ্যন্তরীণ বাজার ছাড়াও বিদেশে রফতানির সুযোগ রয়েছে। গ্রীষ্মকালে যেকোনো চালাঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে, এমন ঘরে এর চাষ করতে হয়। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে এর চাষ হয়ে থাকে। মাশরুম একটি পুষ্টিকর খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমিষ এবং হজমে সাহায্যকারী এনজাইম রয়েছে। রান্না করা প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুমে ৩ দশমিক ১ গ্রাম আমিষ, দশমিক ৮ গ্রাম ফ্যাট, ১ দশমিক ৪ গ্রাম খনিজ পদার্থ, দশমিক ৪ গ্রাম আঁশ, ৪ দশমিক ৩ গ্রাম শর্করা, ৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১১০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, দেড় মিলিগ্রাম লৌহ, দশমিক ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি১, দশমিক ১৬ মিলিগ্রাম বি২, ২ দশমিক ৪ মিলিগ্রাম নিয়াসিন ও ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি রয়েছে। এছাড়া খাদ্যশক্তি থাকে ৪৩ ক্যালরি। সাধারণত মাশরুমে মাছ-মাংসের চেয়ে কিছু বেশি এবং প্রচলিত শাকসবজির চেয়ে দ্বিগুণ খনিজ পদার্থ থাকে। আমিষের পরিমাণ থাকে বাঁধাকপি ও অন্যান্য শাকসবজির চেয়ে চার গুণ। এছাড়া এতে যে ফলিক অ্যাসিড থাকে, তা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। বহুমূত্র রোগী এবং যারা মোটা, তাদের জন্য মাশরুম একটি উত্তম খাবার। এটা খেতে বেশ সুস্বাদু এবং সহজে হজম হয়।
সুস্বাদু এ খাবারের স্বাদ অনেকটা মাংসের মতো। রান্না ছাড়া একে শুকিয়েও খাওয়া যায়। যেকোনো সবজির চেয়ে এর খাদ্যগুণ বেশি। শুকনো মাশরুমেও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, খনিজ পদার্থ ও ভিটামিন থাকে। এটি দাঁত ও হাড়ের গঠনে বিশেষ উপযোগী। রক্তশূন্যতা, বেরিবেরি ও হূদরোগ প্রতিরোধ এবং বহুমূত্র রোগের চিকিৎসায় বিশেষভাবে কার্যকর শুকনো মাশরুম। প্রতি ১০০ গ্রাম শুকনো মাশরুমে ২৫ গ্রাম প্রোটিনসহ ভিটামিন বি, সি, বি কমপ্লেক্স, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, খনিজ পদার্থ, আমিষ, শর্করা, চর্বি, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড ও এনজাইম রয়েছে। এছাড়া এতে ইরিটাডেনিন ও ল্যাম্পট্রল নামে রাসায়নিক পদার্থেরও উপস্থিতি রয়েছে। উপাদান দুটি হূদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, রক্তশূন্যতা, পেটের পীড়া ও রক্তে কোলেস্টেরল কমানোর পাশাপাশি ক্যান্সার প্রতিরোধ, টিউমার বড় হওয়া রোধ এবং হাড় ও দাঁতের গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণার মূল উদ্দেশ্য:
প্রায়োগিক গবেষণাটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মাশরুম চাষের সম্ভ্যাবতা যাচাই ও উপযুক্ত জাত সনাক্ত করে গ্রামের কৃষক পর্যায়ে মাশরুম চাষ প্রচলনের মাধ্যমে আয়, পুষ্টি ও জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা। তাছাড়া, এই প্রায়োগিক গবেষণার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যগুলো হল:
প্রকল্পের/প্রায়োগিক গবেষণার মূল কম্পোনেন্টসমূহ:
মাশরুম চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই ও উৎপাদন এবং বিপণনের লক্ষ্যে বার্ড ক্যাম্পাসে একটি মাশরুম উন্নয়ন ও চাষ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে যেখানে অত্যন্ত সফলভাবে মাশরুম ও মাশরুম স্পন উৎপাদন করা হচ্ছে। উক্ত কেন্দ্রে ১০ টি মাচায় প্রায় ১০,০০০ টি মাশরুম স্পন চাষ করা হচ্ছে। মাশরুম চাষ ও এর স্পন (মাদার ও বাণিজ্যিক) উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (স্টেরিলাইজেশন চেম্বার ও ড্রাম তৈরি) ও উপকরণ (কাঠের গুড়া, ধানের তুষ, তুলা, পিপি ব্যাগ, নেক, রাবার ব্যান্ড ও অটোস্টিন) ক্রয়ের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তাছাড়া, দুই টি ভিন্ন জাতের (হোয়াইট ওয়েস্টার ও পিঙ্ক ওয়েস্টার) মাশরুম সফল ভাবে চাষ করা হচ্ছে এবং মাশরুমের বাণিজ্যিক স্পন উৎপাদন করা হচ্ছে। বাণিজ্যিক স্পন থেকে উৎপাদিত মাশরুমসমূহ বার্ড ক্যাফেটেরিয়া, বার্ডের অভ্যন্তরে ও বাহিরের বিক্রি করা হচ্ছে। প্রায়োগিক গবেষণাটির প্রশিক্ষণ ও উদ্যোক্তা সুজন বিষয়ক কম্পোনেন্টের অংশ হিসেবে “মাশরুম উৎপাদন ও বিপণন” শীর্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন ও বাস্তবায়ন করা হয়।