উদ্যোগী মন্ত্রণালয়/বিভাগ |
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় |
বাস্তবায়নকারী সংস্থা |
বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, কোটবাড়ী, কুমিল্লা |
বাস্তবায়নকাল |
জুলাই, ২০২৩ - জুন, ২০২৬ |
বাজেট |
৩৪,০০,০০০.০০ টাকা (০৩ বছরে সর্বমোট চৌত্রিশ লক্ষ টাকা মাত্র) |
অর্থায়নের ধরণ ও উৎস |
বার্ডের রাজস্ব বাজেট |
প্রকল্প পরিচালক-এর নাম ও পদবি |
মো: রিয়াজ মাহমুদ, যুগ্ম-পরিচালক (কৃষি ও পরিবেশ), প্রধান প্রায়োগিক গবেষক |
১. প্রায়োগিক গবেষণার শিরোনাম: অভিযোজন পদ্ধতিতে চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার মানোন্নয়ন” শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা
২. সমস্যাসহ পটভূমি বর্ণনা:
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসাবে স্বীকৃত। এই দেশের অনন্য ভৌগলিক অবস্থান, প্লাবনভূমির আধিপত্য এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে নিম্ন উচ্চতা, উচ্চ জনসংখ্যার ঘনত্ব, দরিদ্র, প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর সেবাসমূহের উপর একচ্ছত্র নির্ভরতার কারণেই এমনটা হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে ইতোমধ্যে লক্ষ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দেশের উন্নয়ন ধারা ব্যাহত হচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেশের জনগণ জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের অভিযোজন ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। ক্রমাগত বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তন ও তাপমাত্রা পরিবর্তনের প্রভাবে হিমালয়ের বরফ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে এবং কৃষকরা এই ক্ষতি মোকাবেলায় ও অর্থনৈতিক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজী বিকল্প চিন্তা করছে। বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ। দেশের প্রায় ৬২ শতাংশ লোক কোন না কোনভাবে কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশের কৃষি খাতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের চরাঞ্চলগুলোতে মানুষ কৃষি কাজ ও মাছ ধরে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে। চরাঞ্চলের কৃষিকাজ পানির উপর নির্ভরশীল। বছরের বৃহৎ একটা সময় চরের নিম্নভূমি পানিতে তলিয়ে যায়। এছাড়া চরের মাটিও অন্যান্য মাটির চেয়ে ভিন্ন। চরের কৃষি ব্যবস্থাপনা গতানুগতিক। পাশাপাশি চরাঞ্চলে কৃষির আধুনিক সুযোগগুলোর অপ্রতুলতা রয়েছে। তার উপর কৃষিজাত পণ্যের বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রেও চরাঞ্চলগুলো সুবিধা বঞ্চিত। অধিকন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ফলে চরগুলোতে বর্ষা মৌসুমে বন্যা, নদীভাঙ্গন, বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়, শুকনো মৌসুমে খরা, আর্দ্র্যতার অভাব ইত্যাদি সমস্যা ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। ফলে কৃষকরা প্রতিবছর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের এই বিরূপ প্রভাব অব্যাহত থাকলে চরাঞ্চলে দিন দিন সমস্যা বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষের জীবন ও জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। এই ক্ষতি এড়াতে জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজী কৃষি কার্যক্রম ব্যাপকভাবে শুরু করা প্রয়োজন এবং কৃষির উপর একচ্ছত্র নির্ভরশীলতা কমিয়ে বিভিন্ন অকৃষি কার্যক্রমের মাধ্যমে জীবিকার মানোন্নয়ন ঘটানো যেতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের নাম |
মাত্রা বা গ্রেড |
ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেত্রসমূহ |
ক্ষয়ক্ষতির ধরণ |
নিম্নভূমি নিমজ্জন |
1 |
কৃষি কার্যক্রম (শস্য উৎপাদন) |
বছরের প্রায় সাত মাস (জুন-নভেম্বর) কৃষি জমি ০৮-১২ ফুট পানিতে নিমজ্জিত থাকে |
বজ্রপাত |
2 |
মানুষ ও গবাদী প্রাণীর জীবন এবং গাছপালা |
ঘন ঘন বজ্রপাতে মানুষ, গরু, ছাগল ইত্যাদি প্রাণীর মৃত্যু ও গাছ পুড়ে যাওয়া |
নদী ভাঙ্গন |
3 |
কৃষি জমি, বসতবাড়ি ও অবকাঠামো |
ফসল, গাছ, বসতবাড়ী, রাস্তা ইত্যাদি নদী গর্ভে বিলীন হওয়া |
অধিক বৃষ্টিপাত |
4 |
মানব স্বাস্থ্য ও রাস্তাঘাট |
অত্যাধিক বৃষ্টিপাতে মানুষের জ্বর, কাশি, সর্দি ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং বৃষ্টির পানিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় যোগাযোগ ব্যবস্থার অবনতি |
অত্যাধিক তাপমাত্রা |
5 |
মানবদেহ, গবাদি পশু ও শস্য |
অত্যাধিক তাপে মানুষের শ্বাস কষ্ট ও চর্ম বিষয়ক অসহিষ্ণুতা, গরু, ছাগলের ক্লান্তি এবং ফসলে (শসা) কীট-পতঙ্গের উপদ্রব বৃদ্ধি পায় |
চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার মান্নোনয়নে অভিযোজন পদ্ধতিতে কৃষিকাজ এবং বিভিন্ন অকৃষি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করাই হল এই প্রকল্পের সাধারণ উদ্দেশ্য।
তাছাড়া, সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহ হলো:
ক) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করার বিষয়ে চরাঞ্চলের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা;
খ) পরিবর্তিত জলবায়ু উপযোগী কৃষি অভিযোজন কার্যক্রমের সূচনা;
গ) দারিদ্র্য বিমোচনে তরুণ এবং বিপন্ন নারীদের মধ্যে উদ্যোক্তা তৈরি করা; এবং
ঘ) দক্ষতা উন্নয়ন ও আয়বর্ধনমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় কৃষি ও অকৃষি উপকরণ বিতরণের মাধ্যমে আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন সাধনে সহায়তা করা।
৪. প্রায়োগিক গবেষণা গ্রহণের যৌক্তিকতা:
বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এটি একটি নিচু এবং খুব সমতল দেশ, নদীর কারনে সৃষ্ট বন্যা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই ঘটছে, যার পরিমাপ করা হচ্ছে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, পরিবর্তনশীল বৃষ্টিপাত এবং জলবায়ু সংক্রান্ত চরম ঘটনা যেমন বন্যা, আকস্মিক বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা এবং মাটি ক্ষয় দ্বারা । বাংলাদেশের প্রধান প্রধান খাদ্য চাল। চরের লোকেরা প্রতি বছর বিভিন্ন জলবায়ু ঘটিত বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়। অনেক চরে মানুষ সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ করে। চরাঞ্চলের অনেক এলাকা নিচু হওয়ার কারনে বর্ষাকালে কৃষি জমি প্লাবিত হয়। এ কারণে বর্ষাকালে চাষাবাদ করতে পারেন না কৃষকরা। অন্যদিকে উঁচু জমিতে বসবাসকারী মানুষ বছরে তিনটি ফসল চাষ করে। শুষ্ক মৌসুমের ফসল যেমন ইরি ধান-8, ব্রি ধান-28 এবং ব্রি ধান-29 ফসল কাটার আগে ক্ষতিগ্রস্থ হয় কারণ উচ্চ জোয়ার এবং আকস্মিক বন্যার পানি প্রবেশ করে। চরের জমির মানুষের কাছে সম্ভাব্য সম্পদ আছে কিন্তু তারা স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারে সচেত নয়। এছাড়া, তাদের অধিকাংশই ফসলের বীজের আধুনিক প্রযুক্তি যেমন জলমগ্নতা সহনশীল ধানের জাত, স্বল্প মেয়াদী সবজির বীজের কথা জানেন না। তাই, এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য হল বর্ষায় অব্যবহৃত কৃষি জমি ব্যবহারের জন্য অভিযোজন কৌশল অবহিত করা। কৃষকরা তাদের প্লাবিত ফসলি জমিতে বা নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ করতে পারে। জীবিকার উন্নতি তিনটি মৌলিক সূচকের উপর নির্ভর করে যা হলো সম্পদের প্রাপ্যতা, এই সম্পদগুলিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার ক্ষমতা এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে ক্রিয়াকলাপ যা চরের লোকেরা জানে না কিভাবে তারা এই সম্পদগুলিকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করবে। তাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মসূচী, আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রদান, ভাসমান বেড কালচার, খাঁচায় মাছ চাষের সাথে ঐতিহ্যবাহী আমন ধানের জাত, মাছ ও হাঁস পালনের মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকার উন্নতি ঘটবে। প্রায়োগিক গবেষণার সুফলভোগী নির্বাচনে বিপন্ন বিধবা, দরিদ্র, যুবক-যুবতী, আগ্রহী কৃষক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ইত্যাদি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়। উল্লিখিত বিষয়সমূহকে প্রাধান্য দিয়ে সুফলভোগী নির্বাচন করা হয় যা নিম্নরূপঃ
শ্রেণী (অগ্রাধিকার)
১। বিপন্ন, বিধবা নারী
প্রাধিকার বা গুরুত্বের কারণ
- উপার্জনক্ষম পরিবারের সদস্য সংখ্যা
- নির্ভরশীল পরিবারের সদস্য সংখ্যা
- উদ্যোক্তা তৈরি
- সমাজে সম্মান বৃদ্ধি
কার্যক্রম: হস্ত শল্পিরে কাজ
২। আগ্রহী যুবক, কৃষক ও দলবদ্ধ জেলে
প্রাধিকার বা গুরুত্বের কারণ
- উদ্যোক্তা তৈরি
- আমিষের যোগান বৃদ্ধি
- ভিটামিন, খনিজ ও শর্করা যোগান বৃদ্ধি
- অভিযোজন পদ্ধতিতে অধিক ফসল উৎপাদন
- বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি (বছরব্যাপী)
কার্যক্রম: ভাসমান বেডে কৃষি কাজ, সর্জন পদ্ধতিতে সমন্বিত কৃষি কার্যক্রম এবং নদীতে খাঁচায় মাছ চাষ।
৩। দরিদ্র নারী
প্রাধিকার বা গুরুত্বের কারণ
- পরিবারের আর্থিক অবস্থা
- উদ্যোক্তা তৈরি
কার্যক্রম: শাক-সবজি চাষ, হস্ত শিলে।পর পোশাক তৈরী
৪। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কৃষক, নারী উদ্যোক্তা, যুবক এবং দোকানদার
প্রাধিকার বা গুরুত্বের কারণ
- বজ্রপাত ও বায়ুরোধী এবং ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস
- ভিটামিন, খনিজ ও শর্করা সংস্থান বৃদ্ধি
- প্রাকৃতিক জ্বালানী বৃদ্ধি
- কার্বন নিঃসরণ হ্রাস
- বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি
- আমিষের যোগান বৃদ্ধি
- সম্পদের আর্থিক ক্ষতি হ্রাস
- কর্মসংস্থান সৃষ্টি
কার্যক্রম: বজ্র নিরোধক, বায়ুরোধী, ঔষুধী এবং ফলদ বৃক্ষরোপন, শাক-সবজি ও আমন ধানের চাষ, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং হাঁস-মুরগি পালন ।
৫. প্রায়োগিক গবেষণার এলাকা
ক. পুরাতন চরচষী গ্রাম, গুয়াাগাছিয়া ইউনিয়ন, গজারিয়া উপজেলা, মুন্সিগঞ্জ।
খ. নতুন হাসনাবাদ গ্রাম, উত্তর দাউদকান্দি ইউনিয়ন, দাউদকান্দি উপজেলা, কুমিল্লা।
গ. চর কাঁঠালিয়া গ্রাম, লুটের চর ইউনিয়ন, মেঘনা উপজেলা, কুমিল্লা।
ঘ. গোলাপের চর গ্রাম, উত্তর দাউদকান্দি ইউনিয়ন, দাউদকান্দি উপজেলা, কুমিল্লা।
৬. প্রায়োগিক গবেষণার সুফলভোগীর সংখ্যা ও ধরণ:
ক্র. নং |
গ্রামের নাম |
সুফলভোগীর সংখ্যা |
১. |
পুরাতন চরচষী গ্রাম |
১০০ জন |
২. |
নতুন হাসনাবাদ গ্রাম |
১১২ জন |
৩. |
চর কাঁঠালিয়া গ্রাম |
৭৫ জন |
৪. |
গোলাপেরচর গ্রাম |
৪০ জন |
মোট= |
৩২৭ জন |
সুফলভোগীর ধরণ
|
পেশা
|
পুরুষ |
কৃষি, জেলে, শ্রমিক, ট্রলার চালক, গাভী পালন, ব্যবসা, অটো চালক, ইত্যাদি
|
নারী |
গৃহিনী, কৃষি, গাভী পালন, হাঁস-মুরগি পালন, হস্ত শিল্পের কাজ, ব্যবসা ইত্যাদি |
৭. প্রায়োগিক গবেষণার মোট বাজেট:
অর্থবছর |
বাজেট |
২০২৩-২০২৪ |
১০,০০,০০০.০০ |
২০২৪-২০২৫ |
১২,০০,০০০.০০ |
২০২৫-২০২৬ |
১২,০০,০০০.০০ |
মোট= |
৩৪,০০,০০০.০০ |
৮. প্রায়োগিক গবেষণার মেয়াদ: ২০২৩-২০২৪ থেকে ২০২৫-২০২৬ (তিন বছর)
৯. প্রায়োগিক গবেষণার উল্লেখযোগ্য কার্যাবলী (কম্পোনেন্টসমূহ):
ক) গ্রাম সংগঠন ও গ্রাম স্কুল পরিচালনা;
খ) জলাবদ্ধতা সহিষ্ণু ও স্থানীয় আমন ধানের অভিযোজন চর্চা;
গ) অভিযোজন কার্যক্রম ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য শাক-সবজি ও শস্য চাষ;
ঘ) বজ্র নিরোধক, ফলদ ও ভেষজ বৃক্ষরোপন;
ঙ) ভাসমান বেডে অভিযোাজিত কৃষি চাষাবাদ;
চ) সর্জন পদ্ধতিতে সমন্বিত কৃষি কর্মকান্ডের অভিযোজন চর্চা;
ছ) নদীতে দলগতভাবে ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে খাঁচায় অভিযোজিত মাছ চাষ;
জ) পরিবেশ সংরক্ষণে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাযক্রম;
ঝ) আয়বর্ধনমূলক কার্যক্রমে হস্ত শিল্পের কাজ;
ঞ) জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন, পরিবেশ সংরক্ষণ, দুর্যোগের ঝুকিঁ হ্রাস, দক্ষতা উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ কোর্স ও মাঠ দিবস আয়োজন করা।
১০. প্রায়োগিক গবেষণার ব্যয়ের সারসংক্ষেপ:
ক) রাজস্ব: ১২,০০,০০০.০০ (বারো লক্ষ) টাকা (২০২৫-২০২৬ অর্থবছর)
খ) মূলধন: প্রযোজ্য নয়
১১. প্রস্তাবিত প্রায়োগিক গবেষণার বাস্তবায়ন কাঠামো ও বাস্তবায়ন ব্যবস্থাপনা:
বার্ডের মহাপরিচালক মরহাদয়ের নির্দেশনায় এই প্রায়োগিক গবেষণাটি বাস্তবায়ন করা হবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট উপজেলার সরকারি বিভিন্ন বিভাগের সহায়তায় কম্পোনেন্টভিত্তিক কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প বিভাগের তত্ত্বাবধানে প্রায়োগিক গবেষণাটির মাঠের কাজের বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখা হবে। মাঠে সার্বিক কাজে সহায়তা করবেন মাসিক থোক বেতনে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত দুই জন মাঠকর্মী।
১২. প্রেক্ষিত পরিকল্পনা/৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা/ব-দ্বীপ পরিকল্পনা/এসডিজি/পউসবি’সভিশন মিশন অর্জনে প্রস্তাবিত প্রায়োগিক গবেষণার সম্পৃক্ততা:
১৩. দারিদ্র বিমোচন কর্মসংস্থান সৃজন, স্বাস্হ্য ও পুষ্টি উন্নয়ন, জেন্ডার উন্নয়ন, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রভাব:
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ও প্রাকৃতিক দূর্যোগের অভিঘাতে চরাঞ্চলের মানুষের পেশা ও জীবিকায় বিশেষ পরিবর্তন এসেছে। মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন প্রকল্পভুক্ত গ্রামসমূহে বছরব্যাপী কৃষিকাজ, বাজার লিংকেজের সুযোগ না থাকায় অকৃষি কার্যক্রমে চরবাসীগণ সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই এই প্রায়োগিক গবেষণায় অভিযোজন চর্চা কার্যক্রমসমূহের বাস্তবায়নের মাধ্যমে বছরব্যাপী কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া, উদ্যোক্তা তৈরি ও আয়বর্ধনমূলক কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন রকমের অকৃষি কর্মকান্ডের সন্নিবেশ ঘটানো হচ্ছে। বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে ফল ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়াও দুর্যোগ প্রতিরোধে সহায়ক হবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য আনায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। অধিকন্তু, কিছু অভিযোজন চর্চার মাধ্যমে চরবাসীর মধ্যে দলগতভাবে ও অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে কর্মসম্পাদনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে এবং এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে কমিউনিটি পর্যায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে যা কমিউনিটি পর্যায়ে সক্ষমতা বৃদ্ধি ও সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে চরবাসীর জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ও ইতিবাচক অবদান রাখবে। এই প্রায়োগিক গবেষণার কার্যক্রমসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার মান্নোনয়ন তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগে অভিযোজন কার্যক্রম সম্পাদন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি সম্ভব হবে।
১৪. প্রায়োগিক গবেষণার পরবর্তী সময়ে গবেষণার কার্যক্রম টেকসই করণের উপায়:
সময়ে সময়ে কম্পোনেন্টভিত্তিক কার্যাবলী পরিদর্শন, সমিতির কমিটিকে উদ্বুদ্ধ করা ও ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সার্বিক কার্যাবলী তদারকী করা যেতে পারে।
১৫. উপসংহার:
বাংলাদেশের একটা বড় অংশ জুড়ে নিম্ন সমতলভূমি হওয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নদী বিধৌত বন্যায় ও নদী ভাঙ্গনে চরে প্রতিবছরই দূর্যোগের ঝুঁকি বাড়ছে। এছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি অনাবৃষ্টি, হঠাৎ বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বজ্রপাতরে মত দূর্যোগসমূহ পুনঃপুনঃ সংঘটিত হচ্ছে। সমতল ভূমির জমিতে বছরে তিনটি ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। অপরপক্ষে, নি¤œভূমি হওয়ায় চরে বছরের অধিকাংশ সময় কৃষি জমি পানিতে নিমজ্জিত থাকে ফলে বছরে মাত্র একটি ফসল চাষাবাদ হয়। চরের মানুষের যথেষ্ট সম্পদ থাকা সত্বেও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারছেনা। চাষাবাদের আধুনিক প্রযুক্তিগুলোর সাথেও কৃষকগণ তেমন একটা পরিচিত নয়। এছাড়াও, চরগুলোতে বিভিন্ন প্রজাতির বজ্র ও বায়ুনিরোধক, কাঠ উৎপাদক, ভেষজ এবং ফলদ বৃক্ষের রোপন করে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি হ্রাস, ভিটামিন, খনিজ ও শর্করা সংস্থান বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক জ্বালানী বৃদ্ধি ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করা সম্ভব। জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজী বিভিন্ন কৃষি ও আয়বর্ধনমূলক বিভিন্ন অকৃষি কর্মকান্ডের মাধ্যমে চরের মানুষের জীবিকার মানোন্নয়ন সম্ভব। চরাঞ্চলের মানুষের জীবিকার মানোন্নয়নে অভিযোজন পদ্ধতিতে কৃষি কাজ এবং বিভিন্ন অকৃষি কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করাই হলো এই প্রায়োগিক গবেষণা মূল লক্ষ্য ।